শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২২ সালের জুলাই মাস এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি ও খাদ্য ঘাটতি এবং জনগণের অভ্যুত্থানের ফলে পতন ঘটে রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের। সেই শূন্যতায় ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে শপথ নেন নতুন রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমসিংহে।
সংকটময় সময়ে নেতৃত্ব
রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের সময় শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ সংকটে নিমজ্জিত ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য, ঔষধ, জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির অর্থ সংকুলান হচ্ছিল না। বিক্রমসিংহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)–এর সহযোগিতা নিশ্চিত করেন এবং কঠোর অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করেন। এর ফলে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়—কর বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে।
নির্বাচনে ব্যর্থতা
অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার পরও জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হন বিক্রমসিংহে। ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি তৃতীয় স্থানে চলে আসেন। এতে স্পষ্ট হয় যে জনমনে তার জনপ্রিয়তা দ্রুত ক্ষয়ে গেছে এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জনগণকে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
অভিযোগ ও তদন্ত
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার একটি বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, তিনি লন্ডনে ব্যক্তিগত কাজে অংশ নিলেও সফরটিকে সরকারি ভ্রমণ হিসেবে দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রায় ৫০,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয় করেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০২৫ সালের জুনে শ্রীলঙ্কার অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID) এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করে।
ঐতিহাসিক গ্রেপ্তার
অবশেষে ২২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে রনিল বিক্রমসিংহে গ্রেপ্তার হন। অভিযোগ—রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থেকে সরকারি তহবিল অপব্যবহার। এটাই শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন। তাকে সেদিনই আদালতে হাজির করা হয় এবং এটি নতুন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে।
প্রতিক্রিয়া
গ্রেপ্তারের ঘটনায় শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একদল মনে করছে এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ, অন্যদিকে কেউ কেউ একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেও দাবি করছে। তবে নিঃসন্দেহে এটি শ্রীলঙ্কার গণতান্ত্রিক যাত্রায় এক যুগান্তকারী ঘটনা হয়ে থাকবে।