চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, ভুক্তভোগীর বাসায় পুলিশ নিয়ে গিয়ে আদায় ১০ লাখ টাকা

সংক্ষিপ্ত সারমর্ম:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা প্রথমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশের সহায়তায় ভুক্তভোগীর বাসায় প্রবেশ করে এবং পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। ঘটনাটি ঘটে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায়।


মূল প্রতিবেদন:

ঢাকার গুলশানে সংঘটিত এক চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচনায় উঠে এসেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন নেতা নিজেদের “সমন্বয়ক” পরিচয়ে গুলশানে শাম্মী আহমেদের বাসায় প্রবেশ করেন। তখন তাঁরা দাবি করেন, ওই বাসায় একজন পলাতক আসামি অবস্থান করছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে ব্যবহার করে বাসায় নিয়ে গিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন তারা।

পুলিশ চলে যাওয়ার পর রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা ভুক্তভোগী সিদ্দিক আবু জাফরকে হুমকি দেন, যদি চাহিদা অনুযায়ী অর্থ না দেওয়া হয়, তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করানো হবে। একপর্যায়ে ভয়ে সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দেন—যার মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা তিনি নিজে দেন, বাকি পাঁচ লাখ টাকা ভাইয়ের থেকে ধার নেন।

পরে দুই দফায় আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। সর্বশেষ ২০ জুলাই ফের চাঁদার অর্থ আদায়ের চেষ্টা করলে, পুলিশের নজরদারিতে তাদের হাতে-নাতে ধরা হয়।

গ্রেপ্তার ও মামলার অগ্রগতি:

গুলশান থানা পুলিশ রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজাহারে আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আদালত রিয়াদসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে দিয়েছে। আরেক অভিযুক্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের পরিচয়:

  • রিয়াদ: সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক
  • ইব্রাহিম হোসেন: ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক
  • সাকদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব: ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য

ভুক্তভোগীর অভিযোগ:

মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর এজাহারে উল্লেখ করেছেন, রিয়াদ ও তার সহযোগীরা প্রথমে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার হুমকি দেন এবং আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান। প্রথম দফার পর ১৯ জুলাই ও ২০ জুলাই আবার তার বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন।

গ্রামবাসীর প্রতিক্রিয়া ও ভবন নির্মাণ:

রিয়াদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুরে। সেখানে তার একটি একতলা ভবনের নির্মাণকাজ চলছে, যা এলাকার মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রিয়াদের পরিবার দীর্ঘদিন আর্থিক সংকটে থাকলেও হঠাৎ পাকা ভবনের নির্মাণে তারা বিস্মিত।

প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ভবনটির আয়তন প্রায় ১ হাজার বর্গফুট। এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা হতে পারে।

সাবেক নেতার ক্ষোভ:

সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, “চাঁদাবাজি নতুন নয়, বরং এবারই প্রথম তারা ধরা পড়েছে। এই চক্রের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত।”

আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা:

আসামিদের আদালতে হাজির করার সময় আইনজীবীদের মধ্যেও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অনেকে তাদের উদ্দেশে কটূক্তি ছুড়ে দেন এবং ‘চেতনা বিক্রির’ অভিযোগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *