চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে শান্তির পথে এগোলো থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিশ্চিত করেছেন, দুই দেশ শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হাজার বছরের পুরনো সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতির পটভূমিতে, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৬ জন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২ লক্ষ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
📍 সংঘাতের পেছনের কারণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ নতুন করে রক্তক্ষয়ী রূপ নেয় গত বৃহস্পতিবার। মালয়েশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্ব শক্তিগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে শান্তির বার্তা দেন।
📍 শান্তি আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক:
সোমবার মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাসভবনে শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরাও। আলোচনা শেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে – রাত ১২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা সরাসরি যোগাযোগে থাকবেন।
📍 মানুষের প্রতিক্রিয়া ও স্থল বাস্তবতা:
আল–জাজিরার সাংবাদিক টনি চেং জানান, থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের সাধারণ মানুষ যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে যারা সংঘর্ষের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন, তারা ফিরে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তবে আলোচনা শুরুর আগমুহূর্তেও সংঘর্ষ চলছিল বলে জানান চেং। থাই বাহিনী বড় সামরিক প্রস্তুতির দিকে এগোচ্ছিল এবং সীমান্তে গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
📍 উভয় পক্ষের অভিযোগ ও পাল্টা অবস্থান:
থাইল্যান্ডের সামরিক মুখপাত্র কর্নেল রিচা সুকসুওয়ানন জানান, কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচে প্রদেশ থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গিয়েছিল। কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে বলেও দাবি করা হয়।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী পুরনো মন্দির এলাকা — তা মুয়েন থম ও তা কওয়াই — লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে থাই বিমান থেকে ধোঁয়াবোমা ফেলা হয়, তবে এই হামলা প্রতিহত করা গেছে বলে দাবি তাদের।
📍 ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১৯০৭ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিকদের তৈরি মানচিত্রকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ সময় ধরে সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গড়ালেও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। এবারের সংঘাতকে গত ১৩ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।