পুতিনের জন্য স্কুল থেকে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে: ইউক্রেনে প্রাণ হারাচ্ছে রুশ কিশোররা

World

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ১৮ বছর বয়সী কাউকে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হবে না। কিন্তু বিবিসি রাশিয়ান সার্ভিসের এক তদন্তে জানা গেছে, গত দুই বছরে ওই বয়সের অন্তত ২৪৫ জন সৈন্য ইউক্রেনে নিহত হয়েছেন।

নতুন সরকারি নীতিমালার ফলে স্কুল শেষ করা টিনএজাররা এখন বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ এড়িয়ে সরাসরি পেশাদার সৈন্য হিসেবে চুক্তিভিত্তিক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারছেন, এমন তথ্য উঠে এসেছে বিবিসির তদন্তে।

এই কিশোরেরা হয়তো যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে সামগ্রিক প্রাণহানির তুলনায় অল্পসংখ্যক, তবে মোটা অঙ্কের বোনাস এবং দেশপ্রেমমূলক প্রচারণা অনেক তরুণকে এ পথে আকৃষ্ট করেছে।

আলেকজান্ডার পেতলিনস্কি তার ১৮তম জন্মদিনের মাত্র দুই সপ্তাহ পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মাত্র ২০ দিন পর তিনি ইউক্রেনে নিহত হন। তিনি রাশিয়ার পূর্ণমাত্রিক যুদ্ধে নিহত হাজার হাজার সেনার একজন, যেখানে ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের অন্তত ১৩,৫০০ বেসামরিক নাগরিকও প্রাণ হারিয়েছেন।

আলেকজান্ডারের খালা একাতেরিনা জানান, সে ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখত এবং উরাল অঞ্চলের চেলিয়াবিনস্ক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগও পেয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু সাশার আরেকটি স্বপ্ন ছিল। যখন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু হয়, সাশা তখন ১৫। তখন থেকেই সে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত।’

এদিকে, ইউক্রেনে সেনা ডাকার ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর। সেখানেও সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশটির জনসাধারণ। বিক্ষোভের অন্যতম কারণ হচ্ছে যুদ্ধে ২৫ বয়সের নীচে কিশোরদের বাধ্যতামূলক যুদ্ধে পাঠানোর সরকারের সিদ্ধান্ত।

অন্যদিকে, রাশিয়া জাতীয় পর্যায়ের সেনা মোতায়েন (মোবিলাইজেশন) এড়িয়ে চলছে মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে—বিশেষ করে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর তরুণদের জন্য এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রস্তাব।

প্রথম দিকে সেনাবাহিনীতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে অন্তত তিন মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। তবে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কিছু এমপির আপত্তি সত্ত্বেও এই নিয়ম বাতিল করে দেয়া হয়। এখন যেকোনো ১৮ বছর বয়সী তরুণ, স্কুল শেষ করলেই, সরাসরি চুক্তিভিত্তিক সৈন্য হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারে।

রাশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাও তরুণদের মানসিকভাবে সেনা হওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষকরা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বিষয়ক ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ফ্রন্টলাইন থেকে ফিরে আসা সৈনিকেরা স্কুলে গিয়ে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, শিশুদের দিয়ে তৈরি করানো হচ্ছে ক্যামোফ্লাজ নেট ও ট্রেঞ্চ ক্যান্ডেল, এমনকি কিন্ডারগার্টেনের শিশুরাও ফ্রন্টলাইনে পাঠানোর জন্য চিঠি ও ছবি আঁকছে।

২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যসূচিতে যোগ করা হয়েছে একটি নতুন বিষয়—‘নিরাপত্তা ও মাতৃভূমি প্রতিরক্ষা ভিত্তি’ নামে এই পাঠে সোভিয়েত যুগের মতো বড়দের শেখানো হচ্ছে কীভাবে কালাশনিকভ (একে-৪৭) রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে হয়।

অনেক অঞ্চলে সামরিক নিয়োগকর্তারা এখন ক্যারিয়ার ক্লাসে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বলছেন কীভাবে তারা গ্র্যাজুয়েশনের পর সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দিতে পারবে।

সূত্র: বিবিসি রাশিয়ান ইনভেস্টিগেশন।

সোর্স যমুনা নিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *