দুদক ও পিএসসি নিয়োগে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির, চায় দলনিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)–এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২০তম দিনের সংলাপ শেষে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

আখতার হোসেন জানান, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল পিএসসি ও দুদকের নিয়োগে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সম্মতি জানালেও বিএনপি এর বিরোধিতা করেছে। তিনি বলেন, “যেভাবে নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে সম্মত হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও দলীয় অবস্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।”

এনসিসি বা নিয়োগ কমিটি নিয়ে বিতর্ক

এর আগে কমিশনের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব ছিল, যা বিএনপিসহ কয়েকটি দল প্রত্যাখ্যান করে। ফলে পরে কমিশন একটি নতুন প্রস্তাব দেয় – যেখানে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়, যা নির্বাচন কমিশন, দুদক, পিএসসি, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশনসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেবে। তবে বিএনপি ও তাদের সমমনা পাঁচটি দল এই নতুন প্রস্তাবেও আপত্তি জানায়, তাদের মতে এটি নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করবে।

বিএনপি এ প্রস্তাবের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে একটি বিষয়েই সম্মত হয়, তা হলো – কেউ সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে। তবে তারা স্পষ্ট করে দেয়, এই শর্ত পূরণ না হলে সংবিধানে নিয়োগ কমিটির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

দলীয়করণ ও নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে মন্তব্য

আখতার হোসেন বলেন, “গত পাঁচ দশকে ক্ষমতাসীন দলগুলো নিজেদের অনুগতদের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদে বসিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে পরিণত করেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিটি চাই, যেখানে সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এতে করে স্বচ্ছতা ও সুশাসনের পথ সুগম হবে।”

বর্তমানে সংবিধানের ১৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেন। এনসিপির মতে, এই প্রক্রিয়া বদলে নিরপেক্ষ যাচাই ও বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হলে তা হবে একটি কার্যকর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা।

দুদক নিয়ে সরাসরি অভিযোগ

আখতার হোসেন বলেন, “বর্তমানে দুদকের প্রধান সরকারপ্রধান দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় সংস্থা প্রায়শই ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি আড়াল করে, আর বিরোধীদের টার্গেট করে। আমরা চাই, দুদক যেন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং সেখানকার নিয়োগ হোক একটি নিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে, যেখানে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন হবে, দলীয় আনুগত্যের নয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *